top of page

ফারো আইল্যান্ডস: ডাইনি বুড়ির দেশে

  • Writer: Travelograph Partsunknown
    Travelograph Partsunknown
  • Aug 8
  • 3 min read

উত্তর আটলান্টিক মহাসাগর থেকে আরো উত্তরে, উত্তর গোলার্ধের কাছাকাছি, ভেসে আছে ডুবন্ত দানবের কুঁজ। মনে হবে পানি থেকে উঠে আসার চেষ্টা করছে। ছোট ছোট ১৮টি দ্বীপ। বছরের বেশিরভাগ সময়ই থাকে ঠান্ডা আর অন্ধকারে ঢাকা। গ্রীষ্ম বলে তেমন কিছু নেই, হাতে গোনা কয়েকটা মাস সূর্যের দেখা মেলে, দ্বীপপুঞ্জ থাকে ঠান্ডা বাতাসে জর্জরিত। 


A serene moment as Bahar gazes out from a traditional house, enjoying the stunning landscape and water view through the window.
A serene moment as Bahar gazes out from a traditional house, enjoying the stunning landscape and water view through the window.

এই দ্বীপপুঞ্জের পরিচয় জানার আগে জেনে নেওয়া ভালো পুরোনো কিছু কিংবদন্তির গল্প। দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান নরওয়ে ও আইসল্যান্ডের মাঝামাঝি। সে বহুকাল আগের কথা, আইসল্যান্ডে তখন থাকত ডাইনি বুড়িরা। তাদেরই সর্দার একদিন ঠিক করল সাগরের মাঝে জেগে থাকা ওই দ্বীপপুঞ্জকে টেনে নিয়ে আসবে আইসল্যান্ডের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে। যেমন ইচ্ছা তেমন কাজ। দৈত্যকে পাঠানো হলো এক ডাইনি বুড়ির সঙ্গে। সাগর পাড়ি দিয়ে সন্ধ্যার আলো মিলিয়ে যাওয়ার পরপরই দৈত্য-ডাইনি হাজির হলো দ্বীপপুঞ্জে। উত্তর-পশ্চিমের পাহাড়ি আইল্যান্ড দড়ি দিয়ে বাঁধা হলো, শুরু হলো টানাহেঁচড়া। প্রথম চেষ্টা বিফল, ভেঙে পড়ল পাহাড়। শুরু হলো আবার কাজ, যা করার রাতের মধ্যেই শেষ করতে হবে। সূর্যের আলোর অপেক্ষা মানেই তাদের মৃত্যু। আলো এলেই তারা পরিণত হবে পাথরে। 


সেই রাতে ডাইনি দৈত্যের চেষ্টা বিফলে গিয়েছিল, ভোরের আলোর প্রথম রশ্মি তারা বোঝার আগেই পালাতে চেয়েছিল। বিফল সে চেষ্টা, পাহাড়ে তারা পাথরে পরিণত হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে তাদের স্বদেশের দিকে মুখ করে। 


A stunning residence with a green roof blends seamlessly into the picturesque landscape of the Faroe Islands, where rolling hills meet the expansive ocean under a moody sky.
A stunning residence with a green roof blends seamlessly into the picturesque landscape of the Faroe Islands, where rolling hills meet the expansive ocean under a moody sky.

এই দ্বীপপুঞ্জের নাম ফারো আইল্যান্ডস। ডেনিশ রাজতন্ত্রের আওতায় স্বায়ত্তশাসিত একটি দেশ। ছোট ছোট ১৮টি দ্বীপ নিয়ে ফারো আইল্যান্ডস। শারমিন আর আমার জন্য ভ্রমণ অনেকটা নেশা। পৃথিবীর সাত মহাদেশে ৯০টি দেশে আমাদের ঘুরে আসা। ফারো আইল্যান্ডসকে নিয়ে যে কিংবদন্তির গল্প বা এখানকার আবহাওয়া বেশিরভাগ মানুষের জন্যই বসবাসের বা ভ্রমণের অযোগ্য। ফারো থেকে এসে মনে হয়েছে এর প্রয়োজন আছে, ফারো পৃথিবীর মূল ভূখণ্ডের কোনো সৌন্ধর্য নয়। পানি থেকে আকাশ, বাতাসের ঝাঁপটা একে দিয়েছে এক অপ্রাকৃতিক সৌন্ধর্য।


Nestled in the enchanting Faroe Islands, this vibrant town showcases colorful houses against a backdrop of lush, terraced hills, creating a charming, fairy tale atmosphere.
Nestled in the enchanting Faroe Islands, this vibrant town showcases colorful houses against a backdrop of lush, terraced hills, creating a charming, fairy tale atmosphere.

ফারোতে আমাদের ভ্রমণ অল্প কয়েক দিনের। প্লেনে এখানে আসতে হলে ডেনমার্ক, নরওয়ে অথবা আইসল্যান্ড হয়ে আসতে হবে। ইমিগ্রেশনের ব্যাপারে  যা করতে হবে তা ঠিক ডেনমার্কের কপি-পেস্ট। অর্থাৎ ডেনমার্কে যাওয়ার অনুমতি থাকলে সেটাই ফারোতে ঢোকার জন্য প্রযোজ্য। এয়ারপোর্ট থেকে নেমেই গাড়ি ভাড়া করে চলে এলাম পাহাড়ের ওপরে তৈরি করা এক কটেজে।অনেকটা হিলি এরিয়া হেঁটে হেঁটে উঠতে হয়। ছোট কটেজ, সামনে জানালায় তাকালেই অদ্ভুত সমুদ্রের ছোঁয়া, দূরে আরো কিছু আইল্যান্ড কুঁজ উঁচু করে আছে। আকাশ মেঘে ঢাকা। সূর্যের ছিটেফোঁটা রূপ কখনও কখনও উঁকি দেয়। বেশিরভাগ দ্বীপগুলো পানির নিচে টানেল দিয়ে সংযুক্ত। একটু দূরের দ্বীপগুলোতে যেতে হয় বোট বা হেলিকপ্টারে। গাড়ি চালানো বেশ সহজ, যদি স্বাভাবিক নিয়ম-কানুন মেনে চলা যায়। ১৮টি দ্বীপে মোট জনসংখ্যা ৫২ হাজার। কাজেই এখানে শহর বলে কিছু নেই, যা আছে তা ছোট ছোট টাউন। বড় টাউন বলতে তোর্ষাবন, এয়ারপোর্টটাও এখানে। হাতে গোনা কয়েকটা রেস্তোরাঁ। সব মিলিয়ে ফারো আর ১০টি সাধারণ দেশের মতো নয়। এই স্বর্গে মানুষের উপস্থিতি কম, আর সেটাই বোধহয় এই স্বর্গের মূলমন্ত্র।


Sarmin in vibrant colors walks along a winding road, with dramatic mountains rising from the sea under a cloudy sky in the Faroe Islands.
Sarmin in vibrant colors walks along a winding road, with dramatic mountains rising from the sea under a cloudy sky in the Faroe Islands.

পাহাড়ের গা ঘেঁষে গাড়ি চালিয়ে যাওয়া, কখনও থেমে পায়ে হাঁটাপথে সাগরে ডুবে যাওয়া খাড়া পাহাড়ের শেষ বিন্দুতে এসে দাঁড়ানো, সাগরের তলদেশ পেরিয়ে ওপাশটায় অন্য এক আইল্যান্ডে উঁকি দেওয়া, ঝরনা ধারার পাশে খোলা মাঠে গবাদি পশুদের চলে যাওয়া, ক্লান্ত হয়ে কটেজে ফিরে ছাদের সবুজ ঘাসের দিকে মুখ ফিরিয়ে ভাবি পৃথিবীটা এমন হয় না কেন। 


শান্তিময়, অচেনা অপরূপ এক সৌন্দর্যের নামই ফারো। এখানে ঘুরতে এসে শারমীন বলেছিল, কখনও যদি তাকে একা থাকার সুযোগ করে দেওয়া হয়, সে থাকবে এই ফারো আইল্যান্ডে।  



প্রায় হাজার বছর ধরে ফারোর বাসিন্দারা তিমি আর ডলফিন শিকার করে আসছে, যা ছিল একদিন ক্ষুধার তাড়না, একসময় তা পরিণত হয়েছে ঐতিহ্যে। ডলফিন অনেক সমাজবদ্ধ,  বুদ্ধিমান আর সচেতন প্রাণী। এদের ট্রাপ করে তীরে এনে রক্তের বন্যায় ভাসানো হতো সাগর পাড়ে। মানুষের আনন্দ উল্লাসের পাশাপাশি অর্ধমৃত বা বেঁচে থাকা ডলফিনগুলো ভয়ংকর ভয়ে চেঁচাত। অনেক ডকুমেন্টারি আছে তা নিয়ে। পৃথিবীজুড়ে বন্যপ্রাণী রক্ষা, পরিবেশের ভারসাম্য আর পশুদের অধিকার নিয়ে এখন কাজ করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থা। ফলাফলে অমানবিক সেই শিকার বন্ধ হলেও পুরোপুরি শেষ হয়নি। এখনও প্রতিবছর নিয়ম করে ৫০০ ডলফিনকে মারা হয় ঐতিহ্য বজায় রাখতে।

 
 
 

ความคิดเห็น


bottom of page