top of page

কম্বোডিয়া: দুনিয়ার সর্ববৃহৎ মন্দিরে

  • Writer: Travelograph Partsunknown
    Travelograph Partsunknown
  • 11 minutes ago
  • 2 min read

পৃথিবী দেখার নেশায় শারমীন আর আমি ১৫ বছর ধরে ঘুরছি। সেদিন শারমীনকে জিজ্ঞেস করলাম, কম্বোডিয়ার কোথায় যেতে চাও? কোনো সংকোচ না করেই উত্তর—‘আংকোর ওয়াট দেখব।’

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্রার্থনালয় এটি। দ্বাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ৪০০ একরজুড়ে বিশাল মন্দির কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছিলেন সম্রাট দ্বিতীয় সূর্য বর্মণ।


Sarmin and Bahar enjoying a sunny stroll at Angkor Wat, with ancient temple ruins and twisted tree roots as their backdrop.
Sarmin and Bahar enjoying a sunny stroll at Angkor Wat, with ancient temple ruins and twisted tree roots as their backdrop.

খেমার ভাষায় আংকোর ওয়াট মানে ‘মন্দিরের শহর’। তখন রাজ্যমন্দির এবং রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছিল আংকোর ওয়াট। সনাতন ধর্মের দেবতা বিষ্ণুকে উৎসর্গ করে গড়ে তোলা হয়েছিল মন্দিরটি। শতাব্দী ঘুরতে না ঘুরতেই ক্ষমতা চলে যায় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাজার হাতে।ফলে হিন্দু মন্দির পরিণত হয় বৌদ্ধ উপাসনালয়ে।


দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দরিদ্র দেশ কম্বোডিয়া। দেশটির অর্থনীতি মূলত নির্ভরশীল ট্যুরিজম আর পোশাকশিল্পের ওপর। পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রে থাকে সিয়াম রিপ শহরের আংকোর ওয়াট মন্দির কমপ্লেক্স।


কিছুদিন আগে চীন নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করেছে সিয়াম রিপ শহরের বাইরে। পুরনো বিমানবন্দর মন্দিরের খুব কাছেই ছিল। সহস্র বছরের স্থাপনা, একে একে খসে পড়ছে। সঙ্গে যোগ হচ্ছিল বিমানের কম্পন। স্থাপনাটি টিকিয়ে রাখতে চেষ্টার কমতি নেই কম্বোডিয়া সরকারের।


এই মন্দির কমপ্লেক্সে এসে হারিয়ে যেতে হয় কালের যাত্রায়। হেঁটে হেঁটে পার হতে হয় দেয়ালে খোদাই করা বিষ্ণুর ছোঁয়ায়। মন্দিরের মাঝে এখনো বসে থাকেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী। আশীর্বাদ জানান দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের। হোটেল থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলাম। অল্পবয়সী এক তরুণ গাড়ি চালাচ্ছে। সে-ই আমাদের মন্দিরের এপাশ-ওপাশ ঘুরে দেখিয়েছে। ঘণ্টা দুয়েক ছিলাম। এরই মাঝে মন্দির কমপ্লেক্সের বেশ খানিকটা দেখা হয়ে গেছে। কম্বোডিয়ায় দিনের তাপমাত্রা অনেকটা অসহনীয়। সময় নিয়ে আসা ভালো। পূর্ণকালীন চাকরি করি বলে আমাদের সেই সুযোগ কম। যেখানেই গেছি, ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। তবু আংকোর ওয়াট মন্দির আমাদের ছুঁয়ে দেখা হয়েছে। খোদা, ঈশ্বর বা ভগবান, সন্দেহাতীতভাবেই একদিন মানুষকে ক্ষমা করবেন। এই নশ্বরে, এত জ্বালা-যন্ত্রণায়, মানুষ কখনো কার্পণ্য করেনি স্রষ্টার উৎসর্গে। পৃথিবীর মসজিদ, মন্দির, গির্জা তৈরি হয়েছে মানুষের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে। তবু কাল বলে তো একটা কথা আছে। সময় পার হলে জরাজীর্ণতা আসবেই। এই মন্দিরে এসে অবাক হয়ে দেখলাম, কিছু বৃক্ষ তাদের শিকড় মাটিতে না নিয়ে জড়িয়ে দিয়েছে মন্দিরের গায়ে। মন্দিরের সারা শরীর আঁকড়ে ধরে আছে যেন। একদিকে একে একে খসে পড়ছে ইট-পাথরের হাজার বছরের স্থাপনা, অন্যদিকে প্রকৃতি যেন আঁকড়ে ধরে রাখছে বিষ্ণু বা গৌতম বুদ্ধকে। ধর্মে পুনর্জন্মের কথা বলা আছে। সব প্রাণীই বারবার ফিরে আসবে। আগের জন্মের স্মৃতি ছাড়া আসবে ভিন্ন রূপে। এই বৃক্ষ কি এক জনমের পাপ অন্য জনমে প্রতিদানের চেষ্টায় আঁকড়ে ধরেছে?


Sarmin enjoying a sunny day with local Cambodian children at Angkor, surrounded by lush greenery and holding a decorative pink parasol.
Sarmin enjoying a sunny day with local Cambodian children at Angkor, surrounded by lush greenery and holding a decorative pink parasol.

এখানে আমরা যে হোটেলে উঠেছি, সেটা শহুরে কোলাহলের বাইরে। পুরনো গাছ, হ্রদ আর ধানক্ষেতে ঘেরা এই রিসোর্টের নাম হরিহরালয়। নামটি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেবতা ‘হরি’ (বিষ্ণু) এবং ‘হরা’ (শিব)-এর সম্মিলিত রূপ। আলয় মানে বাড়ি। অর্থাৎ হরিহরালয় হলো বিষ্ণু ও শিবের বাড়ি। শারমীন আর আমি সাত মহাদেশে এক শর বেশি দেশে ভ্রমণ করলাম। ভ্রমণে থাকার ব্যবস্থাটাই একটা ভিন্ন অভিজ্ঞতা। ভ্রমণের আগে যথেষ্ট সময় নিয়ে দেখি কোথায় কিভাবে যাওয়া যায়। পৃথিবীর সব শহরেই পাঁচতারা বা সাততারা খচিত হোটেল আছে। চেষ্টা করি সেগুলো এড়িয়ে যেতে।

এই হরিহরালয় রিসোর্ট আমাদের অভিজ্ঞতায় সম্পূর্ণ নতুন এক সংযোজন। কারণ ভ্রমণ মানেই নতুন কোনো অভিজ্ঞতা। জীবন মানেই একদিন খোলা চোখ বন্ধ হয়ে যাওয়া। মাঝের সময়টুকু শুধুই অভিজ্ঞতার সঞ্চয়।

 
 
 

Comments


bottom of page